খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়ি ২৬৯৯.৫৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পার্বত্য চট্রগ্রামের একটি জেলা। যার আটটি উপজেলা ও নয়টি থানা। উপজেলা গুলো হলো খাগড়াছড়ি সদর, মহালছড়ি,মাটি রাঙা ,দীঘিনালা , মানিকছড়ি, পানছড়ি ,লক্ষীছড়ি ও রামগড়। খাগড়াছড়ির প্রধান নদী হলো চেঙ্গী , মাইনী ও কাসালং। এছাড়াও উল্লেখ যোগ্য নদী গুলো ফেনী , গঙ্গারাম,মাসালং ,চিংড়ি ও হালদা। চেঙ্গী খাগড়াছড়ির সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী নদী। চেঙ্গী কর্ণফুলীর শাখা নদী। কর্ণফুলী ভারতের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়েছে। ঢাকা থেকে সড়ক পথে খাগড়াছড়ির দুরত্ব ২৭৫ কিঃ মিঃ। ঢাকা চট্রগ্রাম রোডের বারৈয়ার হাট থেকে হাতের বামে পাহাড়ী আঁকা বাঁকা পথ হয়ে খাগড়াছড়ি যেতে হয়। নল খাগড়া ও ছড়ার সংমিশ্রনে এ অঞ্চলের নাম হয় খাগড়াছড়ি।
যা দেখবেনঃ
আলুটিলা ও গুহাঃ আলুটিলা ঢাকা / চট্রগ্রাম – খাগড়াছড়ি রাস্তার পাশে খাগড়াছড়ি শহরের আগে হাতের বামে অবস্থিত। সমুদ্র পৃষ্ট থেকে যার উচ্চতা ৩০০০ ফুট । দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের সময় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে মানুষ এই পাহাড় থেকে বুনো আলু সংগ্রহ করে খেতো। তখন থেকে এর নাম হয় আলুটিলা । আলুটিলা গুহাকে দেবতা গুহাও বলে । গুহার দৈর্ঘ্য ২৫০ ফুট যা পার হতে ১০-১৫ মিনিটের মতো সময় লাগে। গুহায় ঢুকতে জনপ্রতি ৫ টাকার টিকেট লাগবে। আর মশালও পাবেন ৫ টাকায় । ভালহয় যদি টর্চ নিয়ে যান। গুহার ভিতরে ভাল করে দেখে পা ফেলবেন । অহেতুক তাড়াহুড়া করবেন না।
রিসাংঝর্ণাঃ ঢাকা / চট্রগ্রাম – খাগড়াছড়ি রাস্তার ১০ কিঃ মিঃ পূর্বে রিসাং বা মেম্বার পাড়া বাস ষ্ট্যান্ডে নামতে হবে। বাস ষ্ট্যান্ড থেকে ইট সলিং ধরে ২ কিঃ মিঃ এর মতো এসে হাতের বামে একটু গিয়ে সিড়ি ধরে নীচে নামলেই রিসাং ঝর্ণা পাবেন। পাহাড়ি পথেও আসতে পারবেন। বাস ষ্ট্যান্ড থেকে এই ২ কিঃ মিঃ রাস্তা কিন্তু আপনাকে পায়ে হেঁটে যেতে হবে যদি না আপনি আমাদের দেশের আলোকে বড় সড় কিছু বা আপনার বড় সড় কেউ না থাকে । বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি । তার মানে আমি গাড়ি দিয়ে যাইনি , আমাকে পায়ে হেঁটেই যেতে হয়েছে । যাবার সময় অনেককে গাড়ীতে করে যেতে দেখেছি । সেই থেকে বলা । এটি মাটিরাঙ্গা ইউনিয়নে পরেছে যা ২০০৩ সালে পর্যটকদের নজরে আসে । যার উচ্চতা ১০০ ফুট এর মত । এর মালিক রবীন্দ্র টিপরা । তিনি ১৯৮৯ সালে সরকার থেকে ১০ একর জমি লিজ নেন ।
অপু ঝর্ণাঃ রিসাং ও অপু ঝর্ণার রাস্তা একই । রিসাং বা মেম্বার পাড়া বাস ষ্ট্যান্ড থেকে ইট সলিং ধরে সোজা এসে বামে রিসাং এর দিকে না গিয়ে ২০ গজের মত সামনে এসে বাম দিকে তাকালে ১৫ গজ দূরে একটি তেঁতুল গাছ দেখা যাবে । তেঁতুল গাছের পাশ দিয়ে নিচে ঝিরিতে নেমে ঝিরি ধরে ১৫ মিনিটের মত বাম দিকে গেলে ঝিরির মাথায় অপু ঝর্ণা পাবেন । বর্ষা কালে দড়ি ছাড়া এ পথে নামাটা একটু ঝুঁকিপূর্ণ । তাই একটু সাবধানে নামবেন । অন্য আরেকটি পথে ঝর্ণায় যেতে পারবেন । ইট সলিং ধরে সোঁজা এসে রিসাং বা তেঁতুল গাছের দিকে না গিয়ে সলিং এর শেষ মাথায় এসে হাতের ডানে নেমে যাবেন । ১৫ মিনিটের মত গেলে ঝিরি পাবেন । ঝিরি ধরে বাম দিকে গেলে ঝিরির শেষ মাথায় অপু ঝর্ণা পাবেন । রিসাং এর পাশে কিছু দোকান আছে , দোকানের কাউকে ১০০ টাকা দিলেই ওরা আপনাকে ঝর্ণা দেখিয়ে আনবে ।
দেবতা পুকুরঃ যা মহাতীর্থ নুনছড়ি মাতাই পুখরী দেবতা পুকুর নামে পরিচিত । খাগড়াছড়ি শহর থেকে ১৫ কিঃ মিঃ দক্ষিনে মহালছড়ি রোডে ২৫৭ নং নুন ছড়ি মৌজায় অবস্থিত । মূল সড়ক থেকে মাইচ ছড়ি স্কুল হয়ে ৬ কিঃ মিঃ এর মতো যেতে হয় । ২ একর জমি জুড়ে এর অবস্থান । এটি ত্রিপুরা জাতির তীর্থ স্থান । পাশে একটি মন্দির আছে । নুন ছড়ি ছড়াটি আলুটিলা পর্বত শ্রেণী থেকে পরেছে । আগে সুন্দর এই ঝিরিটি হেঁটে পার হয়ে যেতে হতো । এখন ঝিরির উপর কালভার্ট তৈরী করা হয়েছে । কালভার্টের আগের গ্রাম থেকে পথ দেখানোর জন্য কাউকে নিয়ে যেতে পারেন । সাথে খাবার পানি নিতে ভুলবেন না ।
নিউজিল্যান্ডঃ শহর থেকে ১.৫ কিঃ মিঃ দক্ষিনে পানখাই পাড়ার পাশে অবস্থিত । সি এন জি বা অটোতে করে যেতে পারবেন। আপনি সত্যিকারের নিউজিল্যান্ড না গিয়েও এখানে বসে তার সৌন্দর্য্য উপলব্দি করতে পারবেন।
খাগড়াপুর চার্চঃ শহরের পাশেই অবস্থিত ।
য়ংড বৌদ্ধ বিহারঃ শহরের কাছেই পৌর বাজারের দক্ষিনে অবস্থিত । যা ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ।
লক্ষী-নারায়ণ মন্দিরঃ পৌর বাজারে অবস্থিত ।
ফুলকলি হাতির কবরঃ ফুলকলি তৎকালীন জেলা প্রশাসকের হাতি ছিল । ১৯৯০ সালে আলুটিলা পাহাড় থেকে পা পিছলে পড়ে আহত অবস্থায় মারা যায় । জিরো পয়েন্টের পাশেই এর কবর ।
মং রাজার বাড়িঃ শহর থেকে ২ কিঃ মিঃ দূরে মহালছড়ি রোডের পাশেই অবস্থিত । বর্তমান রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী । যিনি নবম রাজা । অষ্টম রাজা পাইলাপ্রু চৌধুরী ২০০৮ সালে রামগড়ে বাস দূর্ঘটনায় নিহত হন ।
১০ নং বটগাছঃ এই বট গাছের বয়স১০০ বছরের বেশী । মাটিরাঙ্গা ইউনিয়নের ১০ নং মৌজায় এর অবস্থান বলেএকে ১০ নং বট গাছও বলে । শহর থেকে ২২ কিঃমিঃ পশ্চিমে অবস্থিত । বাসেমাটিরাঙ্গা এসে মোটর সাইকেলে এখানে যেতে পারবেন ।
মানিকছড়ি মং রাজার বাড়িঃ জেলা শহর থেকে ৩৬ কিঃ মিঃ দক্ষিন - পশ্চিমে মহালছড়ি রোডে অবস্থিত ।
মহামনী বৌদ্ধ বিহারঃ মানিকছড়ি মং রাজার বাড়ির পাশেই মহামনী টিলার উপর বৌদ্ধ বিহার অবস্থিত । রাজা নেপ্রু শিং এটি তেরী করেন ।
ভাবণা কেন্দ্রঃ মানিকছড়িতে অবস্থিত । বিশ্ব শান্তি স্মৃতিদাম ভাবনা কেন্দ্র । এখানে ৩২ টি মূর্তি আছে ।
৮২ টিলাঃ মাটিরাঙ্গা থেকে দক্ষিনে তবলছড়ি এলাকায় অবস্থিত । একবার তুলা চাষ করতে গিয়ে ৮২ মণ তুলা পায়। সেই থেকে নাম করন হয় ৮২ টিলা । পাশে একটি লেক আছে ।
শহীদ মিনারঃ রামগড় বর্ডারের পাশে ২০০৪ সালে এটি তেরী করা হয় ।
দীঘিনালা বন বিহারঃ দীঘিনালা বাজার থেকে সি এন জি বা অটোতে করে যেতে পারবেন । ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগবে । ১৮ একর জমির উপর এর অবস্থান । বনভন্তে ১৯৬২ সালে এখানে আসেন । উনি১২ বছর এখানে সাধনা করেছেন ।
অরণ্য কুটিরঃ জেলা শহর থেকে ৩০ কিঃ মিঃ উত্তরে পানছড়ি শান্তিপুর অরন্য কুটির অবস্থিত । যা ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । খাগড়াছড়ি শহর থেকে চাঁদের গাড়ী বা সি এন জি রিজার্ভ নিয়ে যেতে পারবেন । এখানে গৌতম বুদ্ধের অনেক বড় একটি মূর্তি আছে ।
ব্যারেজ/ ওয়াটার ড্যামঃ খাগড়াছড়ি শহর থেকে পানছড়ি শান্তিপুর অরন্য কুটির যেতে এটি দেখতে পারবেন ।
ঝুলন্ত ব্রীজঃ এটি দীঘিনালা উপজেলায় অবস্থিত । খাগড়াছড়ি থেকে এটির দুরত্ব ২৪ কিঃমিঃ । মাইনি নদীর উপর ১৯৯০ সালে এটি তৈরী করা হয় । দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প পার হয়ে কাওয়া খালী বাজার থেকে হাতের ডানে ২০ মিনিটের মত গেলে এটি দেখা যাবে ।
মারিষ্যাঃ খাগড়াছড়ি শহর থেকে বাস বা চাঁদের গাড়ীতে যেতে পারবেন ।
তৈদুছড়া/ শিবছড়ি ঝর্ণা ১ঃ ঝর্ণার উপরের ধাপ থেকে নাম করন করা হয় । যাতায়াত সুবিধা ও বহুল পরিচিতির কারণে নীচের ধাপকেই এক লিখলাম । দীঘিনালা বাজার থেকে ২৫ মিনিটের মত গাড়ীতে গিয়ে হেঁটে নদী পার হয়ে যাওয়া আসা সহ মোট ৬ ঘন্টার ট্রেকিং এ তৈদুছড়া ১ ও ২ ঝর্ণা দেখে আসতে পারবেন । এটি মূলত ঝিরি ট্রেইল তাই একটু সাবধানে পা ফেলতে হবে ।
তৈদুছড়া/ শিবছড়ি ঝর্ণা ২ ঃ দীঘিনালা বাজার থেকে ২৫ মিনিটের মত গাড়ীতে গিয়ে হেঁটে নদী পার হয়ে যাওয়া আসা সহ মোট ৬ ঘন্টার ট্রেকিং এ তৈদুছড়া ১ ও ২ ঝর্ণা দেখে আসতে পারবেন । এটি মূলত ঝিরি ট্রেইল তাই একটু সাবধানে পা ফেলতে হবে । তৈদুছড়া ১ নং ঝর্ণা থেকে ৩ টি উপায়ে ২ নং ঝর্ণা যেতে পারবেন । ১) মূল ঝিরি ধরে আসার সময় হাতের বামে এর দিকে না এসে সোজা ২০ মিনিটের মত গিয়ে বামে পাহাড়ী পথে যাওয়া যাবে । এই পথে কেউ যায় না বললেই চলে । তাই পাহাড়ে বড় বড় ছন জাতীয় গাছের কারনে পথ হারানো স্বাভাবিক ব্যাপার । আমরা পথ হারিয়ে ফেলি । এই পথে না যাওয়াই ভাল । ২) তৈদুছড়া এক ঝর্ণার সাথে লাগানো ডান পাশ দিয়ে খাড়া উপরে উঠা যায় । বর্ষা কালে দড়ি ছাড়া এই পথটা কিছুটা বিপদজনক । ৩) ঝর্ণা থেকে ২৫ গজ আগে হাতের ডানে পাহাড়ে উঠে গেছে এই পথটি সব চেয়ে ভাল । আমরা এই পথে নেমেছি ।
সিলাছড়ি গুহাঃ এটি লক্ষীছড়ি উপজেলায় অবস্থিত ।
হাজা ছড়া/ শুকনো ছড়া / থাংঝাং ঝর্ণাঃ দীঘিনালা সাজেক রোডের ১০ নং আর্মি ক্যাম্প পার হয়ে হাতের বামে ১৫ মিনিটের মত হেঁটে গেলে এটি দেখা যাবে । দীঘিনালা সাজেক রোডে ১২ কিঃমিঃ এর মত যেতে হবে । পথে ঝর্ণায় যাবার দিক নির্দেশক বোর্ড আছে ।
হরিণ মারা ঝর্ণাঃ দিঘীনালা সাজেক রোডের ১০নং হতে যেতে হবে।
মাসালং ঝর্ণাঃ দিঘীনালা সাজেক রোডের মাসালং বাজার থেকে যেতে হবে।
সিজুক/ নন্দরাম ঝর্ণা ১ : এটি রাঙ্গামাটি জেলার সাজেক ইউনিয়নের নন্দরামে অবস্থিত । দীঘিনালা সাজেক রোডের নন্দরাম গ্রাম থেকে হাতের ডানে পাহাড়ী ও ঝিরি পথে ৬-৭ ঘন্টা ট্রেকিং করে সিজুক ১ ও ২ ঝর্ণা দেখে আসতে পারবেন । নন্দরাম দিয়ে ঢুকলে অন্য পথ দিয়ে ফিরবেন তাতে দুটো পথই দেখা হবে । বর্ষার সময় সিজুক ১ ঝর্ণায় যেতে কিছু পথ কোমর থেকে বুক সমান পানির মধ্য দিয়ে যেতে হবে । এই সময়ে একটু আস্তে আস্তে পা টেনে হাঁটতে হবে, না হলে ঝিরির মধ্যে ডুবন্ত বাঁশ বা গাছের ডালে খোঁচা লেগে ব্যাথা পেতে পারেন । আর ডুবন্ত বাঁশের টুকরো থেকে চিংড়ি মাছ ধরার আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না । ঝর্ণায় যেতে নন্দরাম গ্রাম থেকে অবশ্যই একজন গাইড নিবেন । ছবি ,এ্যল্টন ও এ্যলবার্ট নামের গাইড আছে নন্দরাম গ্রামে ওদের যে কাউকে অবশ্যই সাথে নিবেন । খাগড়াছড়ি বা দীঘিনালা থেকে চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে যেতে হবে ।
সিজুক/ নন্দরাম ঝর্ণা ২ : এটি রাঙ্গামাটি জেলার সাজেক ইউনিয়নের নন্দরামে অবস্থিত । দীঘিনালা সাজেক রোডের নন্দরাম গ্রাম থেকে হাতের ডানে পাহাড়ী ও ঝিরি পথে ৬-৭ ঘন্টা ট্রেকিং করে সিজুক ১ ও ২ ঝর্ণা দেখে আসতে পারবেন ।
সাজেক ভ্যালী : প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের আঁধার আমাদের মাতৃভূমি রূপসী বাংলা । রূপের অপার সৌন্দর্য্যের সাঁজে সেঁজে আছে বাংলা মা। আমরা সৌন্দর্য্যের খোঁজে ছুটে বেড়াই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে । কিন্তু একবারও কিভেবে দেখেছি আমাদের দেশের সৌন্দর্য্য তাদের চেয়ে কোন অংশে কম নয় । আমরা বিভিন্ন দেশের গ্রীন ভ্যালী দেখতে যাই কিন্তু ঢাকা থেকে মাত্র ৭/৮ ঘণ্টা গাড়ি পথে পার্বত্য অঞ্চলের রাঙামাটি জেলার সাজেক ভ্যালী টা আমরা কজনই বা দেখেছি । হাতে দুই দিন সময় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন এ সৌন্দর্য্য অবলোকন করার জন্য, যা আপনার সুন্দর একটি স্মৃতি হয়ে কল্পনায় গেঁথে থাকবে । সাজেক রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত । সাজেক হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন । যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল । সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা , দক্ষিনে রাঙামাটির লংগদু ,পূর্বে ভারতের মিজোরাম , পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা । সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে । রাঙামাটি থেকে নৌ পথে কাপ্তাই হয়ে এসে অনেক পথ হেঁটে সাজেক আসা যায় । খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব৭০ কিলোমিটার । আর দীঘিনালা থেকে ৪৯ কিলোমিটার । বাঘাইহাট থেকে ৩৪ কিলোমিটার । খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প হয়ে সাজেক যেতে হয় । পরে পরবে ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প । যেখান থেকে আপনাকে সাজেক যাবার মূল অনুমতি নিতেহবে । তারপর কাসালং ব্রিজ, ২টি নদী মিলে কাসালং নদী হয়েছে । পরে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার । বাজার পার হলে পরবে সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া যারউচ্চতা ১৮০০ ফুট । এর প্রবীণ জনগোষ্ঠী লুসাই । এছাড়া পাংকুয়া ও ত্রিপুরারাও বাসকরে । ১৮৮৫ সালে এই পাড়া প্রতিষ্ঠিত হয় । এর হেড ম্যান লাল থাংগা লুসাই । রুইলুইপাড়া থেকে অল্প সময়ে পৌঁছে যাবেন সাজেক । সাজেকের বিজিবি ক্যাম্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিজিবি ক্যাম্প । এখানে হেলিপ্যাড আছে । সাজেকের শেষ গ্রাম কংলক পাড়া । এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া । এর হেড ম্যান চৌমিংথাই লুসাই । কংলক পাড়াথেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায় । যেখান থেকে কর্ণফুলী নদী উৎপন্ন হয়েছে । সাজেক বিজিবি ক্যাম্প এর পর আর কোন ক্যাম্প নাথাকায় নিরাপত্তা জনিত কারনে কংলক পাড়ায় মাঝে মাঝে যাওয়ার অনুমতি দেয় না । ফেরার সময় হাজাছড়া ঝর্ণা , দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ওদীঘিনালা বনবিহার দেখে আসতে পারেন । একদিনে এই সব গুলো দেখতে হলে যত তারাতারি সম্ভব বেড়িয়ে পড়বেন। খাগড়াছড়ির সিস্টেম রেস্তোরায় ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে ভুলবেননা । খাগড়াছড়ি থেকে জীপগাড়ি (লোকাল নাম চাঁন্দের গাড়ি) রিজার্ভ নিয়ে একদিনে সাজেক ভ্যালী ঘুরে আসতে পারবেন । ভাড়া নিবে ৫০০০-৬০০০ টাকা । এক গাড়িতে ১৫ জন বসতে পারবেন । লোক কম হলে শহর থেকে সিএনজি নিয়েও যেতে পারবেন । ভাড়া ৩০০০ টাকার মতো নিবে । অথবা খাগড়াছড়ি শহর থেকে দীঘিনালা গিয়ে সাজেক যেতে পারবেন । বাসে দীঘিনালা জন প্রতি ৪৫ টাকা এবং মোটর সাইকেলে জন প্রতি ভাড়া ১০০ টাকা । দীঘিনালা থেকে ১০০০-১২০০ টাকায় মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়েও সাজেক ঘুরে আসতে পারবেন । ফেরার সময় অবশ্যই সন্ধ্যার আগে আপনাকে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প পার হতে হবে। তা না হলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে । ক্যাম্পের ছবি তোলা নিষেধ এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন ।
রুইলুই পাড়াঃ এটি দীঘিনালা সাজেক রোডেই পরবে ।রাস্তার দুই পাশেই পাড়াটি বিস্তৃত । যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট । এর প্রবীণজনগোষ্ঠী লুসাই । এছাড়া পাংকুয়া ও ত্রিপুরাও বাস করে । ১৮৮৫ সালে এই পাড়াপ্রতিষ্ঠিত হয় । এর হেড ম্যান লাল থাংগা লুসাই । একটু সময় নেমে পাড়াটি দেখে যেতেপারেন ।
কংলক পাড়াঃ সাজেকের শেষ গ্রাম কংলক পাড়া । সাজেকবিজিবি ক্যাম্প পার হয়ে কংলক পাড়ায় যেতে হয় । এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া ।এর হেড ম্যান চৌমিংথাই লুসাই । কংলক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায় । যেখান থেকে কর্ণফুলী নদী উৎপন্ন হয়েছে । সাজেক বিজিবি ক্যাম্প এর পর আর কোন ক্যাম্প না থাকায় নিরাপত্তা জনিত কারনে মাঝেমাঝে কংলক পাড়ায় যাওয়ার অনুমতি দেয় না।
কমলক ঝর্নাঃ সাজেকে এর রুইলুই পাড়া থেকে দুই থেকে আড়াই ঘন্টার ট্রেকিং করে দেখে আসতে পারেন সুন্দর এই ঝর্নাটি, বুনো রাস্তা আর ৮০-৮৫ ডিগ্রি খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে আর উঠতে হবে অনেক খানি তারপর ঝিরিপথ পাবেন, ঝিরিপথ ধরে এগিয়ে আবার উঠতে হবে কিছুটা, এইভাবে আরো কিছুক্ষন ট্রেক করার পর পৌছে যাবেন ঝর্নার কাছে। ঝিরিপথ টিও অসম্ভব সুন্দর, এডভেঞ্চারটি ভালো লাগবে আশা করি। রাস্তাটি বর্ষার সময় খুব পিচ্ছিল থাকে তাই খেয়াল রাখবেন চলার সময়। গাইড রুইলুই পাড়া থেকে ঠিক করে নিবেন, ঝর্নার কথা বললেই হবে, ৩০০-৩৫০ টাকা নিবে।আমরা সাধারণত ২/৩ দিন সময় নিয়ে বের হই । তখন মূল স্থান গুলোই বেশী প্রাধান্য পায় । ঝর্ণার মূল সৌন্দর্য্য দেখতে হলে বর্ষা মৌসুমে যাওয়াই ভাল । এই এলাকা গুলো যেহেতু সংঘাত পূর্ণ তাই যাবার আগে অবশ্যই খোঁজ খবর নিয়ে যাবেন । কোন সমস্যা হলে সাজেক যাবার অনুমতি দেয় না । এছাড়া শহর ও এর আশে পাশের সব জায়গায় যেতে পারবেন । আপনাদের সুবিধার্থে আমি কয়েকটি প্ল্যান দিচ্ছি । আপনারা আপনাদের সুবিধা মত মিলিয়ে প্ল্যান তৈরী করে নিবেন । যা আপনার ভ্রমণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা রাখছি ।
প্ল্যান১:
০ দিনঃ ঢাকা – খাগড়াছড়ি । ( আমরা সাধারণত রাতের বাসে যাই ও ঢাকাকে প্রাধান্য দেই তাই এভাবে লিখলাম ) ।
১ দিনঃ খাগড়াছড়ি – আলুটিলা ও গুহা – রিসাং ঝর্ণা – অপু ঝর্ণা – দেবতা পুকুর ।
২ দিনঃ খাগড়াছড়ি – দীঘিনালা – সাজেক – হাজাছড়া ঝর্ণা – ঝুলন্ত ব্রীজ – দীঘিনালা বন বিহার – খাগড়াছড়ি –ঢাকা ( রাতের বাসে ) ।
প্রথম দিন ২৮০০-৩০০০ টাকায় চাঁদের গাড়ী রিজার্ভ নিয়ে সব গুলো স্থান দেখতেপারবেন । দ্বিতীয় দিন ৫০০০-৬০০০ টাকার মত নিবে ।
প্ল্যান২:
০ দিনঃ ঢাকা – খাগড়াছড়ি ।
১ দিনঃ খাগড়াছড়ি – দীঘিনালা – তৈদুছড়া ১ ও ২ ঝর্ণা – দীঘিনালা ।
২দিনঃ দীঘিনালা– দীঘিনালা বন বিহার- দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রীজ - হাজা ছড়া ঝর্ণা – সাজেক ।
৩ দিনঃ সাজেক- নন্দরাম – সিজুক ১ ও ২ ঝর্ণা – খাগড়াছড়ি – ঢাকা ( রাতের বাসে )
প্রথম দিন চাঁদের গাড়ী রিজার্ভ না নিয়েও যেতে পারবেন । চাঁদের গাড়ী ১১০০-১২০০ টাকার মধ্যে রিজার্ভ নিয়ে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আসতে পারবেন । অথবা বাসে দীঘিনালা জন প্রতি ৪৫ টাকা এবং মোটর সাইকেলে জন প্রতিভাড়া ১০০ টাকা । দীঘিনালা থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন প্রতি ৪০০০- ৪৫০০ টাকার মত নিবে ।
প্ল্যান৩:
০ দিনঃ ঢাকা – খাগড়াছড়ি ।
১ দিনঃ খাগড়াছড়ি – আলুটিলা ও গুহা – রিসাং ঝর্ণা – অপু ঝর্ণা – দেবতা পুকুর ।
২ দিনঃ খাগড়াছড়ি – দীঘিনালা – তৈদুছড়া ১ ও ২ ঝর্ণা – দীঘিনালা ।
৩ দিনঃ দীঘিনালা – সাজেক – হাজাছড়া ঝর্ণা – ঝুলন্ত ব্রীজ – দীঘিনালা বন বিহার – খাগড়াছড়ি – ঢাকা ( রাতের বাসে )
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকাথেকে শ্যামলী , হানিফ ও অন্যান্য পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন । ভাড়া নিবে ৫২০ টাকা । শান্তি পরিবহনেরবাস দীঘিনালা যায় । ভাড়া ৫৮০ টাকা । এছাড়াBRTC ও সেন্টমার্টিন্স পরিবহনের এসি বাস খাগড়াছড়ি যায় । যোগাযোগঃ সেন্টমার্টিন্স পরিবহন - আরামবাগঃ ০১৭৬২৬৯১৩৪১ , ০১৭৬২৬৯১৩৪০ । খাগড়াছড়িঃ ০১৭৬২৬৯১৩৫৮ । শ্যামলীপরিবহন- আরামবাগঃ ০২-৭১৯৪২৯১ । কল্যাণপুরঃ৯০০৩৩৩১ , ৮০৩৪২৭৫। আসাদগেটঃ ৮১২৪৮৮১ , ৯১২৪৫৪ । দামপাড়া(চট্টগ্রাম)ঃ ০১৭১১৩৭১৪০৫ , ০১৭১১৩৭৭২৪৯। শান্তিপরিবহন- ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির ভাড়া ৫২০ টাকা, দিঘিনালা ৫৮০ টাকা, পানছড়ি ৫৮০ টাকা, মেরুন ৬০০ টাকা, মাইনী ও মারিস্যা ৬৫০ টাকা। সায়দাবাদ থেকে সকাল ৮ টায় একটি গাড়ি খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। রাত ১০ টা থেকে ১১.১৫ পর্যন্ত চারটি গাড়ি যায়। রাত ১০ টার গাড়ি পানছড়ি যায়। রাত ১০.৪৫ এর গাড়ি মাইনী। রাত ১১.১৫ গাড়ি মারিস্যা যায়। সব গুলো গাড়িই সায়দাবাদের সময়ের ১ ঘন্টা আগে গাবতলী থেকে ছেড়ে আসে। সায়দাবাদ (ঢাকা)- ০১১৯১২১৩৪৩৮। আরামবাগ( ঢাকা ) –০১১৯০৯৯৪০০৭ । অক্সিজেন(চট্টগ্রাম) ০১৮১৭৭১৫৫৫২ । চট্টগ্রামথেকেও খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন । BRTC এসিবাস কদমতলী(চট্টগ্রাম): ০১৬৮২৩৮৫১২৫। খাগড়াছড়িঃ ০১৫৫৭৪০২৫০৭ ।
রুইলুই পাড়া/ সাজেক ঃ
সাজেক রিসোর্ট : এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত রিসোর্ট। যা সাজেকে অবস্থিত। যার দ্বিতীয় তলায় চারটি কক্ষ আছে। ভি আই পি কক্ষ ১৫,০০০ টাকা। অন্যটি ১২,০০০ টাকা। অপর দুইটি ১০,০০০ টাকা করে প্রতিটি। খাবারের ব্যবস্থা আছে। যোগাযোগ : খাগড়াছড়ি সেনানিবাসের গিরি থেবার মাধ্যমে বুকিং দিতে হবে। যার নম্বর : ০১৮৫৯০২৫৬৯৪। আরেকটি নম্বর : ০১৮৪৭০৭০৩৯৫।
রুন্ময় : এটি সাজেকে অবস্থিত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত একটি রিসোর্ট। এর নীচ তলায় তিনটি কক্ষ আছে। প্রতিটির ভাড়া ৪৪৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। উপরের তলায় দুইটি কক্ষ আছে ভাড়া ৪৯৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে দুই জন থাকতে পারবেন। এটাতেও ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। চারটি তাবু আছে প্রতি তাবুতে ২৮৫০ টাকা দিয়ে চার জন থাকতে পারবেন। যোগাযোগ : ০১৮৬২০১১৮৫২।
ইমানুয়েল রিসোর্ট : এটিতে ৮ টি রুম আছে। সব গুলো কমন বাথ। রুম প্রতি ভাড়া ১৫০০ টাকা ও ৭০০ টাকা। ১৫০০ টাকার রুমে দুইটি ডাবল বেড আছে। ৬ জন থাকতে পারবেন। ৭০০ টাকার রুমে ২ টি বেড আছে। যোগাযোগ: ০১৮৬৫৩৪৯১৩০, ০১৮৬৯৪৯০৮৬৮( বিকাশ)
সারা রিসোর্ট: এটি রুইলুই পাড়ায় অবস্থিত। এর মালিক রুইলুই পাড়ার কারবারী মনা দাদা। এখাণে ৪ টি রুম আছে। তিনটি এটাচ বাথ। একটি কমন বাথ। প্রতি রুমের ভাড়া ১০০০ টাকা। ৪ টি নিলে ৩৬০০ টাকা। প্রতি রুমে একটি খাট আছে। ২ জন থাকা যাবে। রুম গুলো একটু ছোট। টিনের তৈরী। সোলার আছে। যোগাযোগ: ০১৫৫৪৫৩৪৫০৭।
আলো রিসোর্ট : এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এটিতে মোট ৬ টি রুম আছে। ডাবল রুম ৪ টি ( ২টি খাট করে) । যার প্রতিটির ভাড়া ১০০০ টাকা। সিংগেল রুম ২ টি । প্রতিটির ভাড়া ৭০০ টাকা । যোগাযোগ : পলাশ চাকমা - ০১৮৬৩৬০৬৯০৬।
রুইলুই পাড়া ক্লাব হাউজ : এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এখানে ১৫ জনের মত থাকতে পারবেন। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা করে দিতে হবে। নিজেরা রান্না করে খেতে পারবেন। এর কেয়ার টেকার মইয়া লুসাই দাদা সব ব্যবস্থা করে দিবে। লক্ষন নামেও একজন আছে, প্রয়োজনে আপনাদের সহযোগীতা করবে। এখানে দুইটি টয়লেট আছে। একটি ফ্রি ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যটির জন্য ২০০ টাকা প্রদান করতে হবে। যোগাযোগ : মইয়া লুসাই - ০১৮৩৮৪৯৭৬১২। লক্ষন - ০১৮৬০১০৩৪০২।
দীঘিনালাঃ
দীঘিনালা গেস্ট হাউজঃ এটি দীঘিনালা শহরের বাস স্ট্যান্ডের উল্টো পাশে অবস্থিত । এটি দীঘিনালার আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে একটু মানসম্মত । এখানে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে রুম নিয়ে থাকা যাবে । উদ্বোধনের পরপরই ট্রাভেলার হিসেবে এই গেস্ট হাউজে প্রথম আমি ও আমার "বাংলার ট্রেকার"গ্রুপ থাকি এবং অনেককে পাঠানোর কারনে আমার রেফারেন্স দিলে কিছুটা সুবিধা পাবেন । যোগাযোগ- ০৩৭১- ৮১০৫৫ ।
শাহজাহান হোটেলঃ হোটেলটি দীঘিনালা বাজারেই । ০১৮২৫৯৮০৮৬৭ (ম্যানেজার ) ০১৭৩২৫৭৩৬১৫ (মালিক )
কি দিয়ে ঘুরবেনঃ
খাগড়াছড়ি পাহাড়ী এলাকা তাই এই এলাকা পাবলিক বাস সার্ভিস কম । প্রায় সব রুটে পাবলিক বাস চললেও খুব কম । যতটুকু জানি সাজেক রোডে সপ্তাহে একদিন বাজারের দিন বাস যায় তাও একটি । তাই এর আশা করলে ভাল করে কিছু দেখা হবে না । ভাল ভাবে সব কিছু দেখতে হলে নিজস্ব গাড়ী বা রিজার্ভ চাঁদের গাড়ীই ভরসা । চাঁদের গাড়ীর ভাড়া একটু বেশী হলেও যদিবড় গ্রুপ যান তাহলে খরচ অনেকটা কমে আসবে । চাঁদের গাড়ী দুই সাইজের হয় । ছোটটিতে ১৪ জনের মতো বসতে পারবেন । আর ছাদে বসলেতো অনেক । যদি পূর্বের অভিজ্ঞতা না থাকে তবে ছাদে উঠলে লোহার এঙ্গেল ধরে একটু সাবধানে বসবেন । পার্বত্য আঞ্চলের মধ্যে খাগড়াছড়িতে পর্যটক তুলনা মূলক কম যায় তাই অনেক গাড়ি পাবেন । শহরের শাপলা চত্তরের পাশে ও দীঘিনালা বাস ষ্ট্যান্ডে গাড়ী পাবেন । একটুদেখে শুনে দর দাম করে ঠিক করে নিবেন ।
কোথায় খাবেনঃ
শহরে কিছু ভাল মানের খাবার হোটেল থাকলেও দীঘিনালাতে তেমন মানের পাবেন না । তাই সৌন্দর্য দর্শনকে প্রাধান্য দিয়ে এই বিষয়টা একটু ছাড় দিতে হবে । সাজেক সহ ঝর্ণা দেখার দিন অবশ্যই শুকনো খাবার সাথে রাখবেন । আর খাগড়াছড়ি শহরের কাছেই পানখাই পাড়ায় অবস্থিত সিস্টেম রেস্তোরায় অন্তত এক বেলা হলেও খেতে ভুলবেন না। এখানে খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে পারবেন । যোগাযোগঃ০৩৭১-৬২৬৩৪ , ০১৫৫৬৭৭৩৪৯৩, ০১৭৩২৯০৬৩২২।
দীঘিনালার চাঁদের গাড়ির ড্রাইভার রাজ - ০১৮২০৭৪১৬৬২, ০১৮৪৯৮৭৮৬৪৯ । শিবু-০১৮২০৭৪৬৭৪৪ । সাজেক যেতে গাইডের তেমন দরকার নেই । তবুও প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন । আজম(গাইড, দীঘিনালা)- ০১৫৫৭৩৪৬৪৪২, ০১৭৩৭৪৪২২৭২ । ড্রাইভার ও গাইডকে আমার রেফারেন্স দিয়েকথা বললে সাজেক সহ খাগড়াছড়ির সব জায়গায় ওদের নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে আসতে পারবেন বলে আশা করছি । খাগড়াছড়ি থেকে আপনি বাস বা মাইক্রোভাড়া নিয়ে বা নিজস্ব গাড়ীতে ভিতরের মনোরম পাহাড়ী পথে রাঙ্গামাটি যেতে পারবেন । খাগড়াছড়ি থেকে বাসে মহালছড়ি গিয়ে মহালছড়ি জালুয়া পাড়া ঘাট থেকে ট্রলারে নানিয়ারচর হয়ে রাঙ্গামাটি যেতে পারবেন । এছাড়া খাগড়াছড়ি থেকে বাস বা জিপে (লোকাল নাম চাঁন্দেরগাড়ী ) লংগদু গিয়ে ট্রলারে করে রাঙ্গামাটি যেতে পারবেন ।
আপনার সুন্দর ,নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব ভ্রমনেই খুঁজে পাব আমার লেখার স্বার্থকতা । আপনার আনন্দ যাতে অন্যের বিষাদের কারণ না হয় সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন । আপনার ও আপনার সঙ্গীদের দ্বারা প্রকৃতিরও যেনকোন ক্ষতি না হয় সেটাও খেয়াল রাখবেন । আসুন আমরা সাঁজাই আমাদের পৃথিবী সবুজের সমারহে । রেখে যাই সবুজ , সুন্দর ও দূষন মুক্ত পৃথিবী পরবর্তী প্রজন্মের জন্য । সবাই ভাল ও নিরাপদে থাকবেন ।
কোথায় থাকবেনঃ
খাগড়াছড়িতে পর্যটন মোটেল সহ বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল আছে । দীঘিনালায় কয়েকটি হোটেল থাকলেও দীঘিনালা গেস্ট হাউজের মান কিছুটা ভালো ।
পর্যটন মোটেলঃ এটি শহরে ঢুকতেই চেঙ্গী নদী পার হলেইপরবে । মোটেলের সব কক্ষই ২ বিছানার । ভাড়াঃএসি ২১০০ টাকা, নন এসি ১৩০০ টাকা । মোটেলের অভ্যন্তরে মাটিতে বাংলাদেশের মানচিত্র বানানো আছে । যোগাযোগঃ০৩৭১-৬২০৮৪৮৫ ।
গিরি থেবার : এটি খাগড়াছড়ি শহরের কাছে খাগড়াছড়ি ক্যন্টনমেন্টের ভিতরে অবস্থিত। এখানে সিভিল ব্যক্তিরাও থাকতে পারে। সব রুমই শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। যার মধ্যে ২ টি ভি আই পি রুম, প্রতিটির ভাড়া ৩০৫০ টাকা। ডাবল রুম ভাড়া ২০৫০ টাকা। একটি সিংগেল রুম যার ভাড়া ১২০০ টাকা। যোগাযোগ : কর্পোরেল রায়হান- ০১৮৫৯০২৫৬৯৪।
হোটেল ইকোছড়ি ইনঃ খাগড়াপুর ক্যান্টর্মেন্ট এর পাশে পাহাড়ী পরিবেশে অবস্থিত । এটি রিসোর্ট টাইপের হোটেল । যোগাযোগঃ ০৩৭১-৬২৬২৫ , ৩৭৪৩২২৫ ।
হোটেল শৈল সুবর্নঃ ০৩৭১-৬১৪৩৬ , ০১১৯০৭৭৬৮১২ ।
হোটেল জেরিনঃ ০৩৭১-৬১০৭১ ।
হোটেল লবিয়তঃ ০৩৭১-৬১২২০ , ০১৫৫৬৫৭৫৭৪৬ ,০১১৯৯২৪৪৭৩০।
হোটেল শিল্পীঃ ০৩৭১-৬১৭৯৫ ।
বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশ ঘুরতে আসলে আমাদের অনেকের তাদের পার্রমিশন এর জন্য কি করতে হয় তা জানা থাকেনা ভালো করে, তাই সবার সুবিধার্থে দিলাম কি কি করতে হবে আপনাকে।
যে জেলায় যাবেন তার ডিসি অফিসের ওয়েবসাইটে একটি এপ্লিকেশন ফরম্যাট আছে, সেটি ডাউনলোড করে নিবেন।
ট্যূর কোম্পানী থেকে ডিটেইল ট্যুর প্ল্যান নিয়ে এপ্লিকেশনে টেবিল আকারে লিখবেন। এক্ষেত্রে দিন অনুযায়ী যাত্রার সময় এবং থাকার স্থান উল্লেখ করতে হবে। বিদেশী নাগরিকের পাসপোর্ট ও ভিসা নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে।
জেলা প্রশাসনের সাধারন শাখা বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রের অনুমতি দেয়ার পর আপনাকে/ট্যুর কোম্পানীকে একটি কপি ইমেইল করবে। সেখানে উল্লেখ থাকবে যে আপনার অনুমতির কপি কোন কোন কর্মকর্তার/সরকারি অফিসে পাঠানো আছে। (DGFI, Army intelligence, DC office, Cantonment authority and many more)
এপ্লিকেশনটি বিদেশী নাগরিকের পক্ষ থেকে হতে হবে এবং নিচে তার স্বাক্ষর থাকতে হবে। ইমেইল/ডাকে পাঠাতে হবে ট্যুর কোম্পানীর ইমেইল/ঠিকানা থেকে।
ট্যুর কোম্পানীর যোগাযোগ ঠিকানা, কন্টাক্ট নাম্বার ও ইমেইল এড্রেস থাকতে হবে।
জেলা ডিসি অফিসের ওয়েবসাইটে সকল কর্মকর্তার নাম্বার, ইমেইল পাবেন। তাদের সাথে কথা বলে তারপর এপ্লাই করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সাধারনত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ ব্যাপারে দায়িত্বে থাকেন। যে এ দায়িত্বে আছেন তার নাম্বার চেয়ে নিবেন। ওনারা অনেক হেল্পফুল।
অনুমতি পত্রের কয়েকটি কপি সবসময় সাথে রাখবেন এবং ট্যুর কোম্পানীর গাইডকেও একাধিক কপি দিয়ে রাখবেন। গাইড ছাড়া এবং অনুমতির কপি ছাড়া কোথাও যাবেননা।
নিয়মের মধ্যে থাকলে সঠিক নিরাপত্তা/সহযোগীতা পাবেন।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ৭ কার্যদিবস এর মধ্যে পারমিশন পেয়ে যাবেন।
বিদ্রঃ কোন রেজিস্টার্ড ট্যুর কম্পানি অথবা এনজিও ছাড়া পারমিশন দিবে না, আর কোন অবস্থাতেই তাকে একা কোথায় ও যাবার পারমিশন দিবে না।
নিচে এপ্লিকেশন ফরম্যাট টি দেয়া হলো, যে কোন পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে www. এর পরে জেলার নাম এড করলেই হবে, আর অন্য কোন জেলার ক্ষেত্রে পারমিশন এর প্রয়োজন নেই।
http://www.bandarban.gov.bd/site/dc_section_wise_form/9c07f0a6-2147-11e7-8f57-286ed488c766/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%80%20%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95%20%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A8%20%E0%A6%8F%20%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%20%E0%A6%85%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%20%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%AE
অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি যাব নৌপথে। বৌদ্ধ পূর্ণিমা, মে দিবস ও শব-ই-বরাতের ছুটি থাকায় এবার ইচ্ছে পূরণ হবার পালা। সকাল ৭.৩০ মিনিটে রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার ঘাটে লংগদু গামী লঞ্চে চেপে বসলাম আমরা জুনিয়র সিনিয়র মিলে ৪ জন। লঞ্চ ছাড়ার সাথে সাথে শান্ত লেকের পানি দুভাগ করে ছুটল জাপানি হিনো ইঞ্জিনের দুইতলা বিশিষ্ট কাঠের লঞ্চটি। ৪০-৪৫ মিনিট পরে শুভলং ঝর্ণা বামে ফেলে লঞ্চ প্রবেশ করল কর্ণফুলি থেকে কাট্টলি লেকে। ডানে-বামে আকাশ সমান উঁচু উঁচু পাহাড় রেখে লঞ্চ এগিয়ে যাচ্ছে, দূর পাহাড়ে দেখা যায় অনেক ছোট ছোট গ্রাম। প্রায় ২.৩০ ঘন্টা চলার পরে পৌঁছলাম ছোট্ট কাট্টলি দ্বীপে। চারিদিকে অথৈ পানির মাঝে জেগে আছে কাট্টলি বাজার। মূলত এটা হল কাপ্তাই লেকের মাছের ল্যান্ডিং স্টেশন। আছে হাতে গোনা কয়েকটা দোকান ও পুলিশ ক্যাম্প। অসংখ্য জেলে নৌকা মাছ ধরে নিয়ে এখানে এসে পাইকারদের নিকট বিক্রি করছে। কালি বাউস, রুই-কাতলা, চিতল-বোয়াল, বাঁচা কি মাছ নেই এখানে। দামও একেবারেই কম। শুধু লেকের তরতাজা দেশি মাছ খেতে চাইলেও এখানে একবার আসা যায়। ক্যাম্পিং করার জন্য দারুণ নিরাপদ জায়গা। আরো প্রায় ১.৩০ ঘন্টা চলার পর পেলাম লংগদু বাজার। সেখান থেকে মহেন্দ্র অটো রিকশায় দিঘীনালা বাজার হয়ে খাগড়াছড়ি।
এই ৪ ঘন্টার নৌ ভ্রমণটা ছিল এক কথায় একটা এপিক জার্নি। কি নেই এখানে! ক্ষণে ক্ষণে নতুন চমক। জেলেদের মাছ শিকার, লেকের পাড়ের মানুষদের জীবন জীবিকা, দুই পাশে উঁচু উঁচু পাহাড়, ক্রিস্টার ক্লিয়ার শান্ত লেকের জল, লেকের মাঝে মাথা উঁচু করে জেগে আছে অসংখ্য ছোট বড় দ্বীপ। লঞ্চের ছাদে বসে গরম চায়ে চুমুক দিয়ে এমন দৃশ্য অসাধারণ।
যাতায়াত- ঢাকা থেকে রাতের বাসে রাঙ্গামাটি ভাড়া এসি-৯৫০ টাকা নন এসি-৬২০ টাকা। সকাল ৭.৩০ হতে শুরু করে ২ ঘন্টা পরে পরে দুপুর ২.০০ টা পর্যন্ত দিনে ৪ টা লঞ্চ ছাড়ে। ৪ ঘন্টা পরে পৌঁছে লংগদু। ভাড়া ১৪৫ টাকা (লঞ্চের স্টাফ হাসান ভাই- ০১৬৩৬-১৫৪ ৮৯৪)। লংগদু থেকে সরাসরি সকাল ৮.০০ টা ও বিকেল ৫.০০ টায় ঢাকার বাস ছাড়ে শান্তি পরিবহন ভাড়া-৬৫০ টাকা (লংগদু কাউন্টার বাবু ভাই-০১৫৫৬-৩৯৬ ৮৫২) অথবা সেখান থেকে দিঘীনালা শেয়ারড অটো রিকশায় ভাড়া ১৩০ টাকা প্রতিজন সময় লাগে ১.৩০ ঘন্টা।
এরপর দিঘীনালা থেকে সরাসরি ঢাকার এসি-১০০০ টাকা ও নন এসি-৫৮০ টাকা বাস ছাড়ে অথবা খাগড়াছড়ি শেয়ারড অটো রিকশায় ৬০ টাকা প্রতিজন সময় ৪৫ মিনিট। খাগড়াছড়ি থেকে রাতের বাসে ঢাকা ভাড়া এসি-১০০০ টাকা নন এসি-৫২০ টাকা (হানিফ কাউন্টার-০১৭৯৩-১৮৫ ৫৯১)। মানে ১৮০০-২০০০ টাকায় সলো ট্রিপ হয়ে যাবে দারুণ ভাবে। আবার খারড়াছড়ি হয়েও একইভাবে রাঙ্গামাটি যাওয়া যায়। তবে লংগদু হতে লাস্ট লঞ্চ দুপুর ১.৩০ টায় ছাড়ে। কয়েকজনের টিম হলে একরাত কাট্টলি বাজারে নিরাপদে ক্যাম্পিং করেও থাকা যায়। সেক্ষেত্রে খরচ সামান্য বাড়বে।
সবশেষে, অনুগ্রহকরে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। স্থানীয়দের সাথে ভাল আচরণ করুণ। প্রকৃতিকে ভালোবাসুন। হ্যাপি ট্রাভেলিং।
বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশ ঘুরতে আসলে আমাদের অনেকের তাদের পার্রমিশন এর জন্য কি করতে হয় তা জানা থাকেনা ভালো করে, তাই সবার সুবিধার্থে দিলাম কি কি করতে হবে আপনাকে।
যে জেলায় যাবেন তার ডিসি অফিসের ওয়েবসাইটে একটি এপ্লিকেশন ফরম্যাট আছে, সেটি ডাউনলোড করে নিবেন।
ট্যূর কোম্পানী থেকে ডিটেইল ট্যুর প্ল্যান নিয়ে এপ্লিকেশনে টেবিল আকারে লিখবেন। এক্ষেত্রে দিন অনুযায়ী যাত্রার সময় এবং থাকার স্থান উল্লেখ করতে হবে। বিদেশী নাগরিকের পাসপোর্ট ও ভিসা নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে।
জেলা প্রশাসনের সাধারন শাখা বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রের অনুমতি দেয়ার পর আপনাকে/ট্যুর কোম্পানীকে একটি কপি ইমেইল করবে। সেখানে উল্লেখ থাকবে যে আপনার অনুমতির কপি কোন কোন কর্মকর্তার/সরকারি অফিসে পাঠানো আছে। (DGFI, Army intelligence, DC office, Cantonment authority and many more)
এপ্লিকেশনটি বিদেশী নাগরিকের পক্ষ থেকে হতে হবে এবং নিচে তার স্বাক্ষর থাকতে হবে। ইমেইল/ডাকে পাঠাতে হবে ট্যুর কোম্পানীর ইমেইল/ঠিকানা থেকে।
ট্যুর কোম্পানীর যোগাযোগ ঠিকানা, কন্টাক্ট নাম্বার ও ইমেইল এড্রেস থাকতে হবে।
জেলা ডিসি অফিসের ওয়েবসাইটে সকল কর্মকর্তার নাম্বার, ইমেইল পাবেন। তাদের সাথে কথা বলে তারপর এপ্লাই করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সাধারনত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ ব্যাপারে দায়িত্বে থাকেন। যে এ দায়িত্বে আছেন তার নাম্বার চেয়ে নিবেন। ওনারা অনেক হেল্পফুল।
অনুমতি পত্রের কয়েকটি কপি সবসময় সাথে রাখবেন এবং ট্যুর কোম্পানীর গাইডকেও একাধিক কপি দিয়ে রাখবেন। গাইড ছাড়া এবং অনুমতির কপি ছাড়া কোথাও যাবেননা।
নিয়মের মধ্যে থাকলে সঠিক নিরাপত্তা/সহযোগীতা পাবেন।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ৭ কার্যদিবস এর মধ্যে পারমিশন পেয়ে যাবেন।
বিদ্রঃ কোন রেজিস্টার্ড ট্যুর কম্পানি অথবা এনজিও ছাড়া পারমিশন দিবে না, আর কোন অবস্থাতেই তাকে একা কোথায় ও যাবার পারমিশন দিবে না।
নিচে এপ্লিকেশন ফরম্যাট টি দেয়া হলো, যে কোন পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে www. এর পরে জেলার নাম এড করলেই হবে, আর অন্য কোন জেলার ক্ষেত্রে পারমিশন এর প্রয়োজন নেই।
http://www.bandarban.gov.bd/site/dc_section_wise_form/9c07f0a6-2147-11e7-8f57-286ed488c766/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%80%20%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95%20%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A8%20%E0%A6%8F%20%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%20%E0%A6%85%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%20%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%AE
❗পলওয়েল কটেজ, রাঙ্গামাটি।
আমি মালদ্বীপ যাই নি! কিন্তু লেকের উপর বানানো এই নান্দ্যনিক কটেজগুলো যেন মালদ্বীপ মালদ্বীপ একটা ফিল দিচ্ছে! 😍
কাপ্তাই লেকের ঠিক কোল ঘেঁষে মালদ্বীপের কটেজগুলোর আদলে তৈরি করা অভিনব নির্মাণশৈলী ও নান্দ্যনিক এই পলওয়েল কটেজ। মূলত এই কটেজ দেখেই আমাদের রাঙ্গামাটি ভ্রমণের প্লান করা!
রাঙ্গামাটি ভ্রমণের ২য় দিনে হিলতাজ রিসোর্ট চেক আউট করেই আমরা সিএনজি নিয়ে চলে আসি ডিসি বাংলো রোডে অবস্থিত পলওয়েল কটেজে এবং কটেজে চেক ইন করেই রুমে চলে গেলাম, রুমের দরজা খুলে বারান্দায় গিয়ে যে দৃশ্য দেখলাম (সুবহানআল্লাহ্) এটাই ছিল এই ট্যূরের অন্যতম স্মৃতিমাখা এক মুহূর্ত! এই কটেজের বারান্দা থেকে কাপ্তাই লেকের নৈসর্গিক সৌন্দর্য লিখে প্রকাশ করা অসম্ভব। ❤
পলওয়েল পার্ক এন্ড কটেজ
❗পলওয়েল পার্ক এন্ড কটেজ বিস্তারিত:
রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে কাপ্তাই লেকের ঠিক কোল ঘেসে তৈরি করা হয়েছে পলওয়েল পার্ক এন্ড কটেজ। রাঙ্গামাটি জেলার ডিসি বাংলো রোডে অবস্থিত অন্যতম সেরা বিনোদন কেন্দ্র পলওয়েল পার্কে প্রবেশ ফি জনপ্রতি ৩০ টাকা, বিভিন্ন রাইডের ফি ৩০ হতে ৪০ টাকা। এবং সুইমিংপুলের প্রবেশ ফি ২০০ টাকা। এছাড়া এখানে কাপ্তাই লেকে ঘুরার জন্য বোট ও কায়াকিং ব্যবস্থা রয়েছে।
এবার আসি পলওয়েল কটেজ নিয়ে, এখানে রাত্রী যাপনের জন্য মোট ৭টি কটেজ রয়েছে যার মধ্যে ৪টি হানিমুন কটেজ ২টি ফ্যামিলি কটেজ এবং ১টি ভিআইপি কটেজ। হানিমুন কেটেজের ভাড়া ৬০০০ টাকা, ফ্যামিলি কেটেজের ভাড়া ৮০০০ টাকা এবং ভিআইপি কটেজের ভাড়া ১০০০০ টাকা। এই কটেজে রাত্রী যাপন করতে চাইলে সরাসরি গিয়ে রুম না ও পেতে পারেন কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ দিন আগে বুকিং দিয়ে তারপর যেতে পারেন। রুমের সাথে কমপ্লেমেন্টারি হিসেবে সঙ্গে রয়েছে সকালের নাস্তা, সুইমিংপুল ব্রবহারের সুবিধা, পার্ক এন্ট্রি, ওয়াইফাই ও ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
❗ কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে সরাসরি অসংখ্য এসি ও নন এসি বাস রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আমরা সেন্টমার্টিন পরিবহনের (ই-ক্লাস) এসি বাসে করে গিয়েছিলাম বাস ভাড়া ছিল ৯৫০ টাকা। বাস আমাদের রাঙামাটি শহরের নতুন বাস স্ট্যান্ড নামিয়ে দেয় এবং শহর থেকে একটি সিএনজি নিয়ে আমরা চলে যাই ডিসি বাংলো রোডে অবস্থিত পলওয়েল পার্কে।
❌ দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করা থেকে বিরত থাকুন সতর্ক থাকুন।
নৌপথে রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি ( সূত্র : Babul Mahmud )
অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি যাব নৌপথে। বৌদ্ধ পূর্ণিমা, মে দিবস ও শব-ই-বরাতের ছুটি থাকায় এবার ইচ্ছে পূরণ হবার পালা। সকাল ৭.৩০ মিনিটে রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার ঘাটে লংগদু গামী লঞ্চে চেপে বসলাম আমরা জুনিয়র সিনিয়র মিলে ৪ জন। লঞ্চ ছাড়ার সাথে সাথে শান্ত লেকের পানি দুভাগ করে ছুটল জাপানি হিনো ইঞ্জিনের দুইতলা বিশিষ্ট কাঠের লঞ্চটি। ৪০-৪৫ মিনিট পরে শুভলং ঝর্ণা বামে ফেলে লঞ্চ প্রবেশ করল কর্ণফুলি থেকে কাট্টলি লেকে। ডানে-বামে আকাশ সমান উঁচু উঁচু পাহাড় রেখে লঞ্চ এগিয়ে যাচ্ছে, দূর পাহাড়ে দেখা যায় অনেক ছোট ছোট গ্রাম। প্রায় ২.৩০ ঘন্টা চলার পরে পৌঁছলাম ছোট্ট কাট্টলি দ্বীপে। চারিদিকে অথৈ পানির মাঝে জেগে আছে কাট্টলি বাজার। মূলত এটা হল কাপ্তাই লেকের মাছের ল্যান্ডিং স্টেশন। আছে হাতে গোনা কয়েকটা দোকান ও পুলিশ ক্যাম্প। অসংখ্য জেলে নৌকা মাছ ধরে নিয়ে এখানে এসে পাইকারদের নিকট বিক্রি করছে। কালি বাউস, রুই-কাতলা, চিতল-বোয়াল, বাঁচা কি মাছ নেই এখানে। দামও একেবারেই কম। শুধু লেকের তরতাজা দেশি মাছ খেতে চাইলেও এখানে একবার আসা যায়। ক্যাম্পিং করার জন্য দারুণ নিরাপদ জায়গা। আরো প্রায় ১.৩০ ঘন্টা চলার পর পেলাম লংগদু বাজার। সেখান থেকে মহেন্দ্র অটো রিকশায় দিঘীনালা বাজার হয়ে খাগড়াছড়ি।
এই ৪ ঘন্টার নৌ ভ্রমণটা ছিল এক কথায় একটা এপিক জার্নি। কি নেই এখানে! ক্ষণে ক্ষণে নতুন চমক। জেলেদের মাছ শিকার, লেকের পাড়ের মানুষদের জীবন জীবিকা, দুই পাশে উঁচু উঁচু পাহাড়, ক্রিস্টার ক্লিয়ার শান্ত লেকের জল, লেকের মাঝে মাথা উঁচু করে জেগে আছে অসংখ্য ছোট বড় দ্বীপ। লঞ্চের ছাদে বসে গরম চায়ে চুমুক দিয়ে এমন দৃশ্য অসাধারণ।
যাতায়াত- ঢাকা থেকে রাতের বাসে রাঙ্গামাটি ভাড়া এসি-৯৫০ টাকা নন এসি-৬২০ টাকা। সকাল ৭.৩০ হতে শুরু করে ২ ঘন্টা পরে পরে দুপুর ২.০০ টা পর্যন্ত দিনে ৪ টা লঞ্চ ছাড়ে। ৪ ঘন্টা পরে পৌঁছে লংগদু। ভাড়া ১৪৫ টাকা (লঞ্চের স্টাফ হাসান ভাই- ০১৬৩৬-১৫৪ ৮৯৪)। লংগদু থেকে সরাসরি সকাল ৮.০০ টা ও বিকেল ৫.০০ টায় ঢাকার বাস ছাড়ে শান্তি পরিবহন ভাড়া-৬৫০ টাকা (লংগদু কাউন্টার বাবু ভাই-০১৫৫৬-৩৯৬ ৮৫২) অথবা সেখান থেকে দিঘীনালা শেয়ারড অটো রিকশায় ভাড়া ১৩০ টাকা প্রতিজন সময় লাগে ১.৩০ ঘন্টা।
এরপর দিঘীনালা থেকে সরাসরি ঢাকার এসি-১০০০ টাকা ও নন এসি-৫৮০ টাকা বাস ছাড়ে অথবা খাগড়াছড়ি শেয়ারড অটো রিকশায় ৬০ টাকা প্রতিজন সময় ৪৫ মিনিট। খাগড়াছড়ি থেকে রাতের বাসে ঢাকা ভাড়া এসি-১০০০ টাকা নন এসি-৫২০ টাকা (হানিফ কাউন্টার-০১৭৯৩-১৮৫ ৫৯১)। মানে ১৮০০-২০০০ টাকায় সলো ট্রিপ হয়ে যাবে দারুণ ভাবে। আবার খারড়াছড়ি হয়েও একইভাবে রাঙ্গামাটি যাওয়া যায়। তবে লংগদু হতে লাস্ট লঞ্চ দুপুর ১.৩০ টায় ছাড়ে। কয়েকজনের টিম হলে একরাত কাট্টলি বাজারে নিরাপদে ক্যাম্পিং করেও থাকা যায়। সেক্ষেত্রে খরচ সামান্য বাড়বে।
সবশেষে, অনুগ্রহকরে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। স্থানীয়দের সাথে ভাল আচরণ করুণ। প্রকৃতিকে ভালোবাসুন। হ্যাপি ট্রাভেলিং।
টুরিস্ট পুলিশ :